Govinda's (Iskon) pure vegetarian restaurant - a review.
By Joydeep Kotha Khaoa
জনৈকা - এই বাবাই শোন, তোর লেখা পড়ে জানলাম তুই নাকি গরুর মাংস খাস?
আমি - হ্যাঁ, খাই গো।
জনৈকা - শুয়োরের মাংসও তো খাস।
আমি - হ্যাঁ, খাই তো।
জনৈকা - বাড়িতে জানে?
আমি - জানে।
জনৈকা - তোর বাবা জানে?
আমি - সবাই সব জানে।
জনৈকা - কিছু বলে না?
আমি - বলে, খুব বলে, বাবা তো একবার বলেছিলো আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করবে। এখনো করেনি, শুধু বলেছে, যা খুশি করো, আমি মারা গেলে মুখে আগুনটা অন্ততঃ দিও। নিয়ম আচারগুলো মেনো।
জনৈকা - তাও খাস?
আমি - হুম, বাবার কথা ভেবে কষ্ট হয়, এটা ঠিক, কিন্তু খাই, খুঁজে খুঁজে খাই, পেট ভরে খাই।
জনৈকা - সুস্মিতাও খায়?
আমি - আমি যা খাই ও সব খায় না। ও তো আমার বউ, দাসী না, ওর তো নিজস্ব একটা সত্ত্বা আছে, ও দুপুরে চান করে এসে আর রাতে শোয়ার সময় ঠাকুরের নাম নেয়, বালিশের নীচে দীক্ষা মন্ত্র লিখে শোয়, আমার খুব বোকা বোকা লাগে, তখন ওকে খুব কাতুকুতু দিতে ইচ্ছে করে, দিইনা তো, ডিস্টার্ব করিনা ... হি হি হি ... ওর যা মনে হয় করে, যা ইচ্ছে খায়৷ আমাকে ও খাবারের ব্যাপারে কিছু বলে না, আমিও বলি না, খাবারে জোরাজুরি নেই তো।
জনৈকা - তুই না মুখার্জি বামুনের ছেলে?
আমি - হ্যাঁ, একদম ঠিক, আমি মুখার্জি বামুনের ছেলে, কিন্তু আমি যে বামুন নই। আমি আমার জন্মলব্ধ কিছুতে বিশ্বাস করিনা।
জনৈকা - মানে?
আমি - মানে?? হুমম ... আচ্ছা, একটা কথা বলো, তুমি যখন জন্মেছিলে, তোমার কাছে কি কোন option ছিলো তুমি মেয়ে হয়ে জন্মাবে না ছেলে? কেউ কি জিগেস করেছিলো ***দাদুর মেয়ে হয়ে জন্মাতে চাও নাকি মুকেশ আম্বানির ছেলে হয়ে? হিন্দু হতে চাও নাকি মুসলিম? ক্রিশ্চান? মনে পরে? পরে না তো? তাহলে যা by default তাই মেনে চলছো কেন? যে রিকশা থেকে তুমি নামলে, প্রায় তোমারই বয়সি বা বড় হবে, সেই রিকশাওয়ালাকে তুই তোকারি করে কথা বললে, তার জায়গায় তো তুমিও জন্মাতে পারতে। তখন তুমি ওই জায়গায় থাকতে আর উনি তোমার জায়গায়, তাহলে, জন্মলব্ধ কোন কিছুতে বিশ্বাস করছো কেন? তোমার জ্ঞানলব্ধ যা, কর্মলব্ধ যা, তাতে বিশ্বাস করো। তোমার শিক্ষা, জ্ঞান কি বলে যে তোমার ছেলের শরীর খারাপ হলে শুধু হিন্দু বেছে রক্ত নেবে? তোমার বরের heart attack হলে ambulance এর ড্রাইভার যেন কেরেস্তান না হয়?
জনৈকা - বোকা বোকা কথা বলিস না। হিঁদুর ছেলে হিঁদু হবে, মোল্লার ছেলে মোল্লা, কিস্টানের ছেলে কিস্টান, এই তো নিয়ম। তুই বামুনের ছেলে বামুনই তো হবি।
আমি - আচ্ছা বলো তো ধর্মের সহজ মানেটা কি?
জনৈকা - আমি যা ধারণ করি তাইই ধর্ম।
আমি - একদম ঠিক বলেছ, তাহলে আমি যা ধারণ করবো, সেটা আমি নিজে পড়ে জেনে বুঝে ধারণ করবো না কেন? জন্মে যা পেয়েছি সেটাই ধারণ করে চলবো কেন? ”চলতে হবে” কেন? যা সারাজীবন ধারণ করে চলবো, সেটা আমার জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পরে, পড়ে, জেনে বুঝে নেবো না কেন?
জনৈকা - ও তার মানে তুই নাস্তিক?
আমি - নাস্তিক মানে কি গো?
জনৈকা - এ তো সবাই জানে, যে ভগবানে বিশ্বাস করে না।
আমি - কোন ভগবান?
জনৈকা - কেন? শিব, কালী, দূর্গা ...
আমি - আর আল্লাহ, জেসাস, বুদ্ধ, গ্রন্থ সাহেব? তারাও তো কারো ভগবান।
জনৈকা - তারা তো ওদের ভগবান, আমাদের না। বেশি তর্ক করিস না, কথার জবাব দে, তুই কি নাস্তিক?
আমি - আমি নাস্তিক কাকে বলে জানিনা গো। আমি তো ভগবানকে খুঁজছি, যেমন ভাবে ভূত খুঁজি। ভূত খুঁজতে ভাঙা বাড়িতে যাই আর ভগবান খুঁজতে মন্দির মসজিদ গির্জায়। সাধু সন্ন্যাসী, মৌলবি, পাদরি কিছুই বাদ রাখিনি, কিন্তু কিছুই পাইনি এখনো, কিচ্ছু না। সত্যি বলছি, আমি বিশ্বাস করতে চাই। এত্ত লোক যাতে বিশ্বাস করে আমিও তাতে বিশ্বাস করতে চাই। আমি তাকে খুঁজে চলেছি, বইপত্র, ধর্মজ্ঞানী, সবার কাছে, নিরন্তর। ছুটে ছুটে যাই সব ধর্মের কাছে। কিন্তু দেখি তারা সবাই জাহিরে ব্যস্ত, খোঁজায় নয়। যেদিন পাবো, আগা পাশ তলা সব দেখে যেদিন বিশ্বাস হবে, সেদিন, যার কাছে পাবো, তাকেই মানবো।
জনৈকা - ভগবান নেই? এই পৃথিবী, বিশ্ব চলছে কিভাবে? জন্ম মৃত্যু?
আমি - তুমি যা বললে তার কিছু উত্তর আমি আজই বিজ্ঞান দিয়েই দেবো, কিছু হয়তো দশ বছর পরে। কিন্তু তার আগে বল তো, যে ভগবান দ্রৌপদীর শাড়ির যোগান দিতে হাজির ছিলো, সে আসিফার সময় কোথায় ছিলো? আর বরুন মাস্টার মারা যাওয়ার সময়? আর নির্ভয়ার সময়?? আর পাকিস্তানের বাচ্চাদের স্কুলে? আর জমিতে মুখ থুবড়ে পরা দেনায় সর্বস্বান্ত কিষানের বাড়িতে? আর সোনাগাছিতে যখন বাংলাদেশের আমিনার আর বাঁকুড়ার জবার বারো বছরের যৌনাঙ্গ বাইশের মতো করার জন্য পা ফাঁক করে বেঁধে থার্মোকল ঢুকিয়ে দিয়ে জল দিয়ে ভিজিয়ে ফোলানো হয় দিনের পর দিন, ফাঁক বড় করার জন্য, ফেটে রক্তে ভাসে, তখন সে আসেনা কেন? কোথায় থাকে? আল্লাহ কালী জেসাস আরো যারা আছে? মানুষ না খেয়ে মরে আর কেউ লাখ লাখ টাকায় দূগগা পূজা করে, কোটি টাকা খরচা করে সমাজ সেবা বিলায়, আসলে গরীব মানুষদের জেসাসে টানে, কেন? কোনো অদ্ভুত, কোনো অপার্থিব ভালো কিছু ঘটেনা কেন? কবে ঘটবে? বার বার তো আসতেও হভে না, একবার, শুধু একবার প্রকটভাবে এলেই তো কাজ হয়ে যাবে। মিরাকেলরা কি শুধু ধর্মগ্রন্থ গুলিতে শুরু আর শেষ? একজন সাত বছরের শিশুর রেপের শুনানি একদিনে হয় না কেন? তাকে হাজার মশলামাখা চোখের সামনে দিয়ে বার বার আসতে হয় কেন কোর্টের চত্বরে? ভগবান, আল্লাহ, গড নাকি সব জানেন, তাহলে বিচারটা কোর্ট অব্দি আসে কেন? জাজ করে কেনো? ভগবান করেনা কেন? তাহলে জাজকে পূজা না করে ভগবানকে করবো কেন? যে ডাক্তার সারা রাত জেগে রোগী বাঁচায়, তাকে কেনো পূজা করবো না? আল্লাহ কে কেন?
জনৈকা - সেগুলি তো ওদের আগের জন্মের পাপের ফল, এই জন্মে পাচ্ছে।
আমি - তার প্রমাণ? কে বলেছে? তার রেকর্ড কোথায় যে আগের জন্মের না মেলা balance sheet এই জন্মে মেলানো হচ্ছে? তুমি বা তোমার মত যারা একথা বলে, তারা কোথাও না কোথাও গিয়ে ভগবানকে আড়াল করছে না তো?? তাকে মহান করতে সেই শিখিয়ে দিচ্ছে না তো?
জনৈকা (শক্তিশেল ছোঁড়ার মতো করে) - তুই যে কাল বললি, আজ তোর আর সুস্মিতার একাদশী?
আমি - হ্যাঁ, আজ আমাদের একাদশী, আজ আমি সম্পূর্ণ নিরামিষ খাই, ভাত খাই না, শেঁকা জিনিস খাই না।
জনৈকা - তুই তো ভন্ড।
আমি - কেন?
জনৈকা - বললি যে, ধর্ম মানিস না, বামুনের ছেলে, আবার গরু খাস?? আবার একাদশী করিস তুই, কি ধর্ম মানিস তুই?? ভন্ড কোথাকার।
আমি - ধর্ম মানি গো আমি, ভালোবাসার ধর্ম।
জনৈকা - মানে? ভালোবাসার আবার ধর্ম কি?
আমি - মানে খুব সোজা। সবাইকে ভালোবাসা।
জনৈকা - আর আচার বিচার?
আমি - এ ধর্মের কোন আচার বিচার নেই, বাছ বিচার নেই। তুমি আমি নেই, গলা কাটা নেই, গোঁফ কেটে দাঁড়ি রাখার ব্যাপার নেই, কপাল ঠুকে দাগ করা নেই, যৌনাঙ্গ এর মাথা কাটা নেই, মাথা কামিয়ে টিকি রাখা নেই, মাথা ঢেকে কাপড় পরার চল নেই, সবুজ, গেরুয়া, সাদা নেই, "আমার টাই বড়" দেখানো নেই, নিজের ধর্মে মানুষ টানার জন্য টাকা খরচা নেই, লোভ দেখানো নেই, ভগবান নেই, আল্লা নেই, ভগবান নেই, গুরু নেই, ক্রশ নেই, পাগড়ি নেই, খাবারে ছুৎমার্গ নেই। পূজা নেই, আচ্চা নেই, আজান নেই, ঘন্টা নেই, গুরবানীও নেই। কোন বাঁধন নেই।
জনৈকা (চোখ আরো কপালে তুলে) - কি বলছিস কি তুই ভুলভাল? এ আবার কি ধর্ম? কিছুই নেই?
আমি - আছে তো, যা আছে তা খুব সোজা, সবাইকে ভালোবাসা আছে, বাঁচা আছে আর বাঁচতে দেওয়া আছে। খাওয়া আছে আর খাওয়ানো আছে।
জনৈকা - সে সব ছাড়, যত উদ্ভট কথা, তাহলে এই একাদশী কি ধর্মীয় আচার নয়?
আমি - হ্যাঁ, আচার তো, হিন্দু আচার। কিন্তু আমার বউ মানে যে।
জনৈকা (এবার সত্যিই জয়ের হাসি) - তাহলে?? মানে, তুই বউয়ের কথায় উঠিস বসিস?
আমি - হা হা হা ... তা একটু উঠি বসি বইকি, ভালোবাসি যে। জানো, শুধু বউ না, আমি মায়ের কথাতেও উঠি বসি। আগে, বাড়িতে গাছ থাকতে মৌমাছির কামড় খেয়ে পেড়ে দিতাম, এখন বৃহস্পতিবার বাজার থেকে আম পল্লব এনে দি। লক্ষী, সরস্বতী পূজার বাজার, মনসা পূজায় জল ছেটাবার জন্য কত রকম পাতা সব এনে দি। প্রসাদের ফল মিষ্টি, পূজার ফুল তো রোজ আনি।
জনৈকা - তোর কথা বুঝতে পারছি না রে, তুই এ সব কিচ্ছু মানিস না, তাহলে এই সব পূজার জিনিস কিনে দিস কেন?একাদশী করিস কেন?
আমি - মাকে খুশি রাখার জন্য আর সুস্মিতাকে খুশি রাখার জন্য। ওই যে বললাম, ভালোবাসার ধর্ম। আমি তো কোনো সমাজ সংস্কারক নই, জ্ঞান ও সীমিত আমার, তাই বিলাতে চাই না। নিজেই এখনো নিজের সাথে দড়ি টানাটানি করছি, তাই জোর দিয়ে বলতেও পারিনা যে আমি যা বলছি বা ভাবছি সেটাই ঠিক, আমি শুধু এটা বুঝি, নিজের ব্যক্তি সত্ত্বা বজায় রেখে, আমার ভালোবাসার মানুষগুলিকে ভালো রাখাই আমার ধর্ম। ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ভালোবাসাই আমার পূজা। আমি পূজার সামগ্রী না এনে দিলে ষাট বছরের মা বা সত্তর বছরের বাবাকে যেতে হবে বাজারে।
সুস্মিতার মা মারা যাওয়ার পরে পুরোহিত মশাই বলেছেন, একবছর একাদশী করতে, আবার এটাও বলেছেন, এঁয়ো স্ত্রী একাদশী করতে পারেনা যদি না স্বামী করেন৷ তার মানে আমি যদি একাদশী না করি, তাহলে নিয়ম মতে সুস্মিতাও করতে পারবে না। এদিকে তার খুব ইচ্ছে, মায়ের স্মরণে এক বছর এই ধর্মীয় আচারটা পালন করে, আমি যদি না করি তো তারও একটা ইচ্ছে অপূর্ণ রয়ে যাবে। তাই আমি যতটুকু পারি নিষ্ঠাসহ একাদশী করি।
জনৈকা - শোন, ছাড় তোর ভুলভাল কথা, আগামী রোববার আমার গুরুদেবের আশ্রমে যাবো আমার সাথে যাবি। দেখবি ভগবান আছেন কি না।
আমি - অবশ্যই যাবো গো, প্রসাদ দেবে?
জনৈকা - হ্যাঁ সবাই কত কত মিষ্টি আনে দেখবি।
আমি - আহা, কখন যাবে রোববার?
জনৈকা - আমি বলবো তোকে, আজ যাই রে, শোন, পূজা আচ্চা কর, বিশ্বাসী হ, একদিন কিন্তু তার কাছেই যেতে হবে।
আমি - আগে তো রোববার যাই তোমার সাথে।
জনৈকা - এখন কোথায় যাচ্ছিস?
আমি - আমি আর সুস্মিতা যাবো, রেস্টুরেন্টে খেতে।
জনৈকা - এই যে বললি একাদশী?
আমি - হ্যাঁ গো, একদম শুদ্ধ শাকাহারী রেস্টুরেন্ট। Govinda's, Gurusaday road এ।
সেদিন খেয়েছিলাম Govinda's এ। আমারই এক ফেসবুক তুতো খাদ্য রসিক দাদা, সাম্যদার সাজেশনে। অভিজ্ঞ মানুষটি নিরামিষ খাওয়ারের একদম সঠিক জায়গা বলেছেন আমাকে।
খেলাম Govinda's special thali (4.2/5) দুজনে দুটো। দাম আর গুনমানের সাযুজ্য রয়েছে। ভাতটা খাইনি বলে পেটটা একটু খালি খালি লাগছিলো তাই একটা Tandoor Plater (3/5)। থালিটার দাম Rs.300 করে। আর Tandoor plater টা Rs. 250. থালিটা কিন্তু one time থালি, মানে পরে আর কিছু নিলে তার টাকা আলাদা। গুনমান বেশ ভালো, পরিমান ঠিকঠাক তবে, এক্কেবারে গতে বাঁধা খাবারের বাইরে অন্য কিছু ডিশ দেওয়া যেতে পারে। Tandoor plater টা আমার ভালো লাগেনি। ওনাদের ব্যাপক renovation চলছিলো, তাই অন্য একটা ঘরে বসিয়ে খাওয়ালেন। আসার সময় নীচের মিষ্টির দোকান থেকে দারুণ দারুণ মিষ্টি খেলাম। এই দোকানটাও Govinda's এরই। সব মিষ্টির নাম দাম মনে নেই। তবে মাখা সন্দেশ টাইপের একটা মিষ্টি খেয়েছিলাম, Gur backed নামে Rs. 30 করে, দারুণ।
সমাপ্ত।
Joydeep Kotha Khaoa
An error has occurred! Please try again in a few minutes